মা – এ শব্দটির সাথে জীবের নাড়ির সর্ম্পক। জীব জগতে মাতৃত্ব ওতোপ্রেতভাবে জড়িত। প্রাণিজগতে নারীর পূর্ণতা আসে কেবলমাত্র মাতৃত্বেই। বৃক্ষ যেরুপ পূর্ণতা পায় ফুলে-ফলে। তদ্রুপ নারী জীবনে স্বার্থকতা পায় মাতৃত্বে।
মাতৃজঠরে মা তার সন্তানকে যে অমূল্য রসসমুহ প্রদান করে তা সৃষ্টির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ সমস্ত রসের কারণেই জীব জীবনাচারে ব্যাপৃত হয়। মা তার জঠরে যে সৃষ্টিকে ধারণ করছেন তা কেবল তার শুদ্ধাচারের কারণেই জীব কল্যাণ প্রাপ্ত হয়। আসুন দেখি এলমে তাসাউফের দৃষ্টিতে মা তার সৃষ্টিকে কি দিচ্ছেন?
এলমে তাসাউফে মা তার স্বামীর নিকট থেকে যা পাচ্ছেন তা হচ্ছে এলমে তাসাউফের ভাষায় নুরে মুহাম্মদী। এ নুরে মুহাম্মদীর মধ্যে রয়েছে উনিশটি উপাদান। এ উনিশটি উপাদান বিসমিল্লাহ বলে খ্যাত আছে। সে উনিশটি উপাদান হলো – ১।হাইউন, ২।আলিমুন, ৩।কুদিরুন, ৪।মুরিদুন, ৫।সামিউন, ৬।বসিরুন, ৭।কলিমুন, ৮।দম, ৯।কদম, ১০।অহম, ১১।ফহম, ১২।আক্কেল, ১৩।এলেম, ১৪।হেলেম, ১৫।আগুন, ১৬।পানি, ১৭।মাটি, ১৮।বাতাস, ১৯।নূর।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর ১৯ টি অক্ষরের মধ্যে কিন্তু মূল অক্ষর আছে ১০ টি। আর এই ১০ টি অক্ষরই মোট ১৯ বার ব্যাবহার হয়েছে। যেমন-
১। আলিফ-ব্যাবহার হয়েছে=৩ বার, ২। মীম-ব্যাবহার হয়েছে=৩ বার, ৩। বড় হে-ব্যাবহার হয়েছে=২ বার,  ৪। রা-ব্যাবহার হয়েছে=২ বার,  ৫। লাম-ব্যাবহার হয়েছে=৪ বার,  ৬। নুন-ব্যাবহার হয়েছে=১বার,  ৭। ছোট হে-ব্যাবহার হয়েছে=১ বার , ৮। বা-ব্যাবহার হয়েছে=১ বার,  ৯। সীন-ব্যাবহার হয়েছে=১ বার,  ১০। ইয়া-ব্যাবহার হয়েছে= ১ বার।
এই দশ অক্ষর কে বিসমিল্লাহর প্রাণ অক্ষর বা বীজ অক্ষর বলা হয়।
এবার আসুন বিসমিল্লাহর স্বরুপ দর্শণ করি।
বিসমিল্লাহ একটি সাংকেতিক শব্দ। যা দিয়ে নুরে মুহাম্মদীকে বুঝানো হয়েছে।এই নুরে মুহাম্মদীর মধ্যে ১০টি মহাস্বত্বা ১৯ ভাবে বিরাজিত। নুরে মুহাম্মদীর এই ১০ অক্ষর দিয়ে মানুষের দেহের ১০টি মূল স্বত্বা সৃষ্টি হয়েছে।
তাহলো- ১। কালেব, ২। রুহু , ৩। ছের,  ৪। খফি,  ৫। আখফা,  ৬। নফস,  ৭। আব , ৮। আতশ,  ৯। খাক,  ১০। বাত।
তম্মধ্যে কালেব ও রুহু তিন তিন ভাবে অবস্থান করছে। ছের ও নফস দুই দুই ভাবে অবস্থান করছে । আখফা চার ভাবে অবস্থান করছে। এছাড়া খফি, আব , আতশ, খাক ও বাত এক এক ভাবে অবস্থান করছে।
বিসমিল্লাহ হলো সৃষ্টির বীজ বা প্রাণ। বিসমিল্লাহ ব্যাতীত কোন কিছুই সৃষ্টি হয়নি। আমাদের সকলেরই সৃষ্টি শুরু বিসমিল্লাহ দিয়েই হয়েছে। মূলতঃ বিসমিল্লাহ হলো- নুরে মুহম্মদী। বিসমিল্লাহর মাধ্যমে পিতা আমাকে মাতার গর্ভে দিলেন ৭+৭+৫=১৯ রুপে আমাতে জাহান্নাম করে। যার ১৯ জন দ্বার রক্ষিও দিয়ে দিলেন। মাতা তার জান্নাতি ধন ৭+৫=১২ দিয়ে তা পূরণ করে দিলেন। জন্মের পরে আমরা মায়ের দেওয়া জান্নাতি ধনই খরচ করছি।
মায়ের বক্ষদেশের দুই স্তনের ডান স্তনে পাঁচটি রস ভাণ্ড ও বাম স্তনে সাতটি রস ভাণ্ড রয়েছে। ডান স্তনের পাঁচটি রস ভান্ডের নাম হলো-১। নুরী ২। জহুরী ৩। যব্বুরী ৪। সত্তুরি ৫। বে-খুদী। এই পাঁচ ভান্ডে যে ধন উৎপত্তি হয় তাহলো-১। আগুণ ২। পানি ৩। মাটি ৪। বাতাস ৫। আকাশ।
বাম স্তনের সাতটি রস ভান্ডের নাম – ১। শনি-অশুভ ২। রবি-সূর্য ৩। সোম-চন্দ্র ৪। মঙ্গল-শুভ ৫। বুধ-ক্ষুদ্র ৬। বৃহস্পতি-বৃহৎ ৭। শুক্র-বীর্য। এই সাতটি ভান্ড হতে যে রস উৎপন্ন হয় সেগুলো হলো-১। হাইউন-জীবিত শক্তি ২। আলিমুন-জ্ঞান শক্তি ৩। কুদিরুন-কর্মশক্তি ৪। মুরিদুন- যৌনশক্তি ৫। সামিউন-শ্রবণশক্তি ৬। বসিরুন-দর্শণ শক্তি ৭। কালিমুন-বাকশক্তি।
এই সাত ও পাঁচ মোট বারোটি রস ভাণ্ডকে কালাম বা কলেমা বা বাক্য বলা হয়। সৃষ্টির জন্য এই কলেমাই হলো সব থেকে উত্তম। তাই এই কলেমাকে কলেমায়ে তৈয়ব বা উত্তম বাণী বলা হয়। আর এই বারোটি ভাণ্ড হতে যে রস সমুহ ঝরে পড়ে  তাই গর্ভের সন্তান প্রাপ্ত হয়। এলমে তাসাউফের ভাষায় এই বারটি ভাণ্ডকে বারোটি হরফ বা অক্ষর বলা হয়। আর সে জন্যই কলেমা তৈয়বের অক্ষর সংখ্যা বারোটি। এই বারোটি ভাণ্ড বা অক্ষর হতে যে রস সমুহ ঝরে পড়ে তাই জীবের দেহ মধ্যের বারোটি মৌলিক ক্রিয়া সাধন স্বত্বাকে সচল রাখতে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত স্বত্বা ও জ্বালানী স্বত্বার নিরাপত্তা স্বত্বা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। জীব দেহের মৌলিক বারোটি ক্রিয়া সাধন স্বত্বা হলো-
১। ওয়াজেবল অজুদ, ২। অহেদাল অজুদ, ৩। আরেফেল অজুদ, ৪। মোমতেনাল অজুদ, ৫। মোমকেনাল অজুদ, ৬। জীবিত শক্তি, ৭। জ্ঞান শক্তি, ৮। কর্ম শক্তি, ৯। শ্রবণ শক্তি, ১০। যৌণ শক্তি, ১১। দর্শণ শক্তি ও ১২। বাক শক্তি। কলেমা তৈয়বের বারোটি অক্ষর হতে জীবের দেহ মধ্যের এই বারোটি স্বত্বা সচল রাখার জ্বালানী ও জ্বালানী স্বত্বার নিরাপত্তা স্বত্বা প্রাপ্ত হয়। সুতরাং মা তার সন্তানকে যে অমূল্য সম্পদ দান করছেন তাতে মাকে মন্দির বলাটা কোন মতেই অযৌক্তিক নয়। আর একারণেই বলা হয়েছে – মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত। যে মন্দিরে সন্তান বেড়ে উঠে সেই মন্দিরের পুজা করা প্রতিটি সন্তানের জন্য অবশ্য করণীয়।
সংগ্রিহিত